চিংড়ি (Shrimp) কি মাছ, এবং ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি খাওয়া হালাল কি না — এই বিষয়টি ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ আছে। আমরা নিচে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করবো কুরআন, হাদীস এবং ইসলামী ফিকহের আলোকে।
🔹 চিংড়ি কি মাছ?
বৈজ্ঞানিকভাবে চিংড়ি একটি ক্রাস্টেশিয়ান (Crustacean), যা মাছের প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ইসলামী শরীয়তের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের চেয়ে আরবিতে "সামাক" (سمك) বা মাছের সাধারণ অর্থ এবং সাহাবাদের প্র্যাকটিস বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়।🔹 কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি
আল্লাহ তাআলা বলেন:"তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার এবং তা ভক্ষণ হালাল করা হয়েছে তোমাদের ও যাত্রীদের জন্য..."
— সূরা আল-মায়েদা (5:96)
🔸 এই আয়াতে সাধারণভাবে সমুদ্রের সকল জীব (মাছ সহ) হালাল বলা হয়েছে। তবে এখানেও ব্যাখ্যার দরকার হয়: সব সামুদ্রিক জীব কি হালাল? না কি কিছু নির্দিষ্ট?
🔹 হাদীসের আলোকে
হাদীসে নবী (সা.) বলেছেনঃ"সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী হালাল।"
— আবু দাউদ, হাদীস: 83; তিরমিযী, হাদীস: 69
🔸 এই হাদীসের আলোকে হানাফী মাজহাব ব্যতিক্রম কিছু ব্যাখ্যা দেয়।
🔹 মাজহাবভিত্তিক মতামত
🟩 হানাফি মাজহাবঃ- হানাফি আলেমদের অধিকাংশ মতে, কেবল সেই সামুদ্রিক প্রাণী হালাল যাকে "সামাক" বলা হয়, অর্থাৎ প্রকৃত মাছ।
- যেহেতু চিংড়ি মাছ নয়, তাই অনেক হানাফি আলেম এটিকে মাকরূহ তানযীহি (খাওয়া উচিত নয়, তবে হারাম নয়) বলেন।
- কিন্তু বর্তমান অনেক হানাফি আলেম চিংড়িকে মাছজাতীয় বলে স্বীকার করেন এবং হালাল বলেন (বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশে প্রচলিত মত অনুযায়ী)।
🟦 শাফেয়ী, মালিকী ও হাম্বলী মাজহাবঃ
- এই তিন মাজহাবের আলেমদের মতে, সমুদ্রের সকল প্রাণী হালাল, যেহেতু হাদীসে বলা হয়েছে: "এর মৃত প্রাণী হালাল।"
- তাই তাদের মতে চিংড়ি সুস্পষ্টভাবে হালাল।
পরিশেষে বলা যায়
- হানাফী মাযহাবে মতভেদ রয়েছে। তবে অনেক আলেম মাকরূহ বলেন, অনেকে হালাল বলেন।
- শাফেয়ী, মালিকী, হাম্বলী মাযহাবে হালাল।